Finance

50/30/20 রুল কি ? আপনার আর্থিক পরিকল্পনায় এর কার্যকারিতা

2 Minute Read

বর্তমান যুগে আমাদের অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি যে – একটি নির্দিষ্ট মাসিক উপার্জন থাকার পরেও আমরা মাসের অর্ধেক কাটতে না কাটতেই অর্থের অভাব অনুভব করি। আমরা এটাই হিসেবে করে পাইনা যে মাসের শুরুতে যে টাকা সম্পূর্ণ মাস চলার জন্য পর্যাপ্ত মনে হচ্ছিলো হটাৎ করে তা কোথায় চলে গেল। এই সমস্যা একবার দুবার না বরং প্রতি মাসের নিয়ম হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যদি আপনিও এই একই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তবে আজকের আর্টিকেলটি আপনার এই সমস্যা দূর করতে সহায়ক হবে।

আর্থিক সমস্যা দূর করার জন্য আপনার সবার আগে প্রয়োজন একটি সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা। আমাদের মনে হতেই পারে উপার্জন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা হয়তো এই সমস্যা দূর করতে পারি কিন্তু বাস্তবে উপার্জন রাতারাতি বৃদ্ধি করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সময়ের সাথে সাথে উপার্জন বৃদ্ধি হলেও যদি আপনার কাছে সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা না থাকে তবে সেই বর্ধিত উপার্জন থেকেও আপনি সেই আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হবেন।

৫০/৩০/২০ হল আপনার পার্সোনাল বাজেট তৈরী করার একটি পদ্ধতি। সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন আর্থিক উপদেষ্টারা এই নিয়মটিকে বাজেট প্ল্যানিং এর একটি মাপদন্ড মনে করেন। এক্ষেত্রে আপনার মাসের উপার্জনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় – ৫০% – ৩০% এবং ২০%। এই নির্দিষ্ট পরিমান টাকা কোন কোন খাতে খরচ হবে তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –

৫০ % মৌলিক চাহিদা (Basic Needs) :-

আপনার জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলি যা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব তা আসবে এই ৫০% এর মধ্যে। এর মধ্যে মূলত থাকে খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান। একটা কথা মনে রাখতে হবে আপনার বিনোদনের কোনো বিষয় এই ৫০% এর মধ্যে ধরলে চলবে না। বাড়িভাড়া, মুদিখানা, বাজার, ওষুধ, জল, ইলেকট্রিক ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিল পেমেন্টস এর মধ্যে থাকবে। আপনাকে চেষ্টা করতে হবে যেন আপনার মৌলিক চাহিদার খরচ কোনোভাবেই আপনার মোট মাসিক উপার্জনের ৫০% এর বেশি না হয়।

যদি কোনো কারণবশত আপনার মাসিক উপার্জন অনেকটাই কম হয় তাহলে আপনাকে আপনার চাহিদা (৩০%) থেকে কিছুটা টাকা বাঁচিয়ে তা খরচ করতে হবে মৌলিক চাহিদায়, অথবা আপনাকে আপনার লাইফস্টাইল কে কিছুটা নিচে নিয়ে আসতে হবে, যতক্ষণ না আপনার উপার্জন প্রয়োজন অনুযায়ী বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩০% চাহিদা (Wants) :-

আপনার মৌলিক চাহিদা বাদে আপনার যে সমস্ত চাহিদা রয়েছে তা থাকছে এই ৩০% চাহিদার মধ্যে। এই লিস্টে থাকতে পারে – আপনার যেকোনো শখ, রেস্টুরেন্টের খরচ, পার্টির খরচ, বিভিন্ন অনলাইন মেম্বারশিপ, আপনার কোনো পছন্দের মোবাইল , ল্যাপটপ , বাইক বা অন্য যেকোনো শপিং , ঘুরতে যাওয়ার খরচ ইত্যাদি। এই পদ্ধতিতে প্রতি মাসে আপনার একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকাই এই খাতে খরচ হবে এবং এই খরচ আপনার মৌলিক চাহিদা বা বিনিয়োগকে নষ্ট করবে না।

২০% সঞ্চয় (Savings) :-

আপনার মোট আয়ের অন্তত ২০% আপনাকে সঞ্চয় করতেই হবে কারন এই টাকাই আপনার ভবিষ্যতের কাজে লাগবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে কাজে বাজারে সবসময় একপ্রকার অনিশ্চয়তা রয়েছে এবং বহু কাজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আবার নতুন ধরনের কাজ বাজারে আসছে। কাজের বাজারের এই অনিশ্চয়তার জন্যই আপনাকে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের প্রতি সজাগ হতে হবে। আপনার Basic Needs এবং Wants এর মধ্যে কিছুটা কম করলেও Savings এর ক্ষেত্রে সেটা কখনোই করা উচিত নয়। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আপনাকে আপনার মাসিক উপার্জনের অন্তত ২০% টাকা সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করতে হবে। কত পরিমান টাকা কোথায় বিনিয়োগ বা সঞ্চয় করলে ভালো হয় তা নিয়ে জানতে ইচ্ছুক থাকলে আমাদের কমেন্টে জানান আমরা এর ওপর একটি ডিটেইলস আর্টিকেল বানাবো।

একবার আপনার আর্থিক পরিকল্পনা কার্যকর হয়ে যাওয়ার পরে আপনি আপনার সুবিধা মতন এই অনুপাতগুলি কিছুটা কম বেশি করতে পারেন। যেমন যদি দেখাযায় যে ৫০% এর কমেই আপনার মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ হয়ে যাচ্ছে তাহলে সেই টাকা আপনি আপনার চাহিদা বা সঞ্চয়ে যোগ করতে পারেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে সঞ্চয় আমাদের ভবিষ্যতের হাতিয়ার তাই সেখানে যেন কোনোভাবেই ঘটতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

আশাকরি আর্থিক পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের লেখাটি ভালো লাগবে। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *