বিটকয়েন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কী ? ব্লকচেইন কী ? What is CryptoCurrency ?
ক্রিপ্টোকারেন্সি কী
বিটকয়েন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কী ? ব্লকচেইন কী ?
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একপ্রকারের ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল কারেন্সি। ক্রিপ্টোকারেন্সিকে যদি আমরা। দু’টি ভাগে ভাগ করি তাহলে পাবো – ক্রিপ্টো আর কারেন্সি। ক্রিপ্টো বা ক্রিপ্টোগ্রাফি কথার অর্থ হলো এক বিশেষ ধরনের ডিজিটাল পদ্ধতি যার মধ্যে এনক্রিপশন ও ডিক্রিপশনের মাধ্যমে কোনো তথ্যকে গোপন ও সুরক্ষিত রাখা হয় আর কারেন্সি কথার অর্থ হলো মুদ্রা। এই দুইটি জিনিসের মিশ্রণে তৈরি ডিজিটাল মুদ্রাকে বলাহয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা যে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে চলে তাকে বলাহয় “ব্লকচেইন“।
ব্লকচেইন কী ?
ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে জানতে গেলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে ব্লকচেইন সম্পর্কে, কারণ এর ওপর ভিত্তি করে ক্রিপ্টোকারেন্সি কাজ করে। ব্লকচেইন হলো একপ্রকার অনলাইন ডেটাবেস যেখানে সেই নেটওয়ার্কে করা সমস্ত আদানপ্রদান গুলি স্টোর ক’রে রাখা হয় আলাদা আলাদা ব্লকের মধ্যে। এই ব্লকগুলি একে ওপরের সাথে যুক্ত থাকে ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে। ব্লকচেইন সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা পরবর্তী আর্টিকেলে করা হবে।
বিটকয়েন কী ?
বর্তমানে প্রায় ১৫০০০ এরও বেশি প্রকারের ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে রয়েছে, কিন্তু এদের মধ্যে সর্বপ্রথম ও সবথেকে জনপ্রিয় হলো Bitcoin (BTC) । বলাহয় যে ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোটো নাম এক ব্যক্তি Bitcoin এর সূচনা করেন এবং তার পর থেকেই বিভিন্ন ভাবে বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে এর মূল্য। বর্তমানে একটি বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ৫০০০০ মার্কিন ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকার সমান।
বিটকয়েন হলো একটি ডিসেন্ট্রালাইজড কারেন্সি , যার লেনদেন সরাসরি দু’জন ব্যক্তির মধ্যে হয় এবং এর জন্য এদের মধ্যে কোনো তৃতীয় পক্ষ বা Bank এর প্রয়োজন হয়না। এই মুদ্রা কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকার তৈরী করেনা এবং এই মুদ্রা কারো নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে থাকা বিভিন্ন কম্পিউটারের মাধ্যমে এই বিনিময় সম্পন্ন হয় এবং এই আদানপ্রদানের সমস্ত তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মধ্যে স্টোর হয়ে থাকে।
বিটকয়েন কীভাবে কাজ করে ?
আমরা যখন কার্ড বা ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে কোনো অনলাইন পেমেন্ট করি তখন সেই পেমেন্ট রিকুয়েস্ট টি প্রথমে আমাদের থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির একাউন্টে পৌঁছনোর জন্য মাঝখানে এক তৃতীয় পক্ষ্যের Approval এর প্রয়োজন হয় আর সেটা হলো আমাদের ব্যাংক। প্রথমে আমাদের রিকুয়েস্টটি ব্যাংক বা নির্দিষ্ট ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের ওয়েব সার্ভারে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির একাউন্টে পৌঁছায়।
বিটকয়েনের ক্ষেত্রে সেন্ডার এবং রিসিভার এর মধ্যে কোনো তৃতীয় পক্ষ থাকে না। বিটকয়েন এবং অধিকাংশ ডিসেন্ট্রালাইজড ক্রিপ্টোকারেন্সি পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করে, অর্থাৎ আপনার থেকে পাঠানো নির্দিষ্ট অংকের বিটকয়েন রিসিভারের একাউন্টে সরারসি পৌঁছে যায় এবং এই পদ্ধতিতে ট্রাঞ্জাকশন ফি চিরাচরিত পদ্ধতিগুলির থেকে অনেক কম লাগে।
আপনার থেকে পাঠানো বিটকয়েনটি ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে থাকা বিশ্বের বিভিন্ন কম্পিউটারের দ্বারা প্রসেস ও কনফার্ম করা হয় আর এই কারণেই এই আদানপ্রদানে কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থা থাকেনা। আপনার দ্বারা করা ট্রাঞ্জাকশনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে ব্লক আকারে স্টোর করা থাকে। যেহেতু এই ট্রাঞ্জাকশনগুলি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা কম্পিউটারগুলি ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আলাদা আলাদা ভাবে কনফার্ম ও স্টোর করে তাই একে বদলানো বা হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব। এই কারণেই ক্রিপ্টোকারেন্সি আদানপ্রদানকে অনেক বেশি সুরক্ষিত মানা হয়।
Read More : ফ্রিল্যান্সিং কি ? কিভাবে শিখবো, কাজ করবো ও এর মাধ্যমে আয় করবো ?
বিটকয়েন কিভাবে তৈরী হয় এবং বিটকয়েন মাইনিং কী ?
যেমনটা আমরা আগের পয়েন্টেই আলোচনা করলাম যে বিটকয়েন কাজ করে ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এবং এর জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর কম্পিউটার এবং তাদের প্রসেসিং ক্ষমতার। বিটকয়েন উৎপাদিত হয় মাইনিং এর মাধ্যমে যেখানে কম্পিউটারের প্রসেসিং ক্ষমতার ভিত্তিতে লেনদেন লিপিবদ্ধ এবং সত্যাখ্যান করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন কম্পানি ও ব্যক্তিরা নিজেদের কম্পিউটার ও তার প্রসেসিং ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্লকচেইন নেটয়ার্কটিওকে চালায় ও বিটকয়েন আদানপ্রদানের তথ্যগুলি তাতে স্টোর করে , এই ব্লকগুলি তৈরী করার বদলে তাদের Token of Appriciation হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমান বিটকয়েন দেওয়া হয়। সিস্টেমে কন্ট্রিবিউট করার বদলে ব্লকচেইন সিস্টেম তাদের রিওয়ার্ড হিসেবে যে Token বা Coin দেয় তাই হলো বিটকয়েন এবং বিটকয়েন তৈরী করার এই পদ্ধতিকে বলে Bitcoin Mining. অধিকাংশ Decentralized CryptoCurrency এভাবেই মাইনিং করা হয়। যারা এই মাইনিং করে তাদের বলা হয় মাইনার।লেনদেন থেকে মোট কত বিটকয়েন উৎপাদিত হবে তা প্রতি চার বছর পরপর কমে যায়। এভাবে ২১৪০ সাল পর্যন্ত মোট ২,১০,০০,০০০ বিটকয়েন তৈরী হবে এবং পরবর্তীতে আর কোন নতুন বিটকয়েন তৈরী করা হবে না।
বিটকয়েন ক্রয় এবং বিক্রয় করা যায় কীভাবে ?
অনালাইনে বিটকয়েন এবং বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার বা বিক্রি করার বিভিন্ন উপায় আছে, তবে এদের মধ্যে যেটা সবথেকে বেশি জনপ্রিয় তা হলো এক্সচেঞ্জ। বিশ্বে যেমন বিভিন্ন স্থানে নির্দিষ্ট মুদ্রায় টাকা পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ রয়েছে ঠিক তেমনই রয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে অনালাইনে। ধরুন আপনি ইন্ডিয়া থেকে আমেরিকায় টাকা পাঠাতে চান, এক্ষেত্রে প্রথম সমস্যা হলো ভারতের কারেন্সি INR এবং আমেরিকার কারেন্সি হলো USD. এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হয় এক্সচেঞ্জের যেখানে আপনি আপনার ভারতীয় মুদ্রার বা যে দেশে আপনি বসবাস করেন সেখানকার মুদ্রার বদলে যে দেশে টাকা পাঠাবেন সেই দেশের মুদ্রা পান।
ঠিক সেই পদ্ধতিতেই কাজ করে Crypto Exchange. এখানে আপনি টাকার বদলে সমান মূল্যের বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে এবং পরবর্তীতে সেই কয়েন বিক্রি করে নিজের কারেন্সিতে টাকা পেতে পারেন। Exchange National এবং International দুই ধরনেরই আছে। বর্তমানে ভারতে এমন অনেক এক্সচেঞ্জ রয়েছে যেখানে আপনি সরারসি ভারতীয় মুদ্রার বদলে CryptoCurrency কিনতে পারবেন। যদি আপনার দেশে সেই ব্যবস্থা না থাকে তাহলে ইন্টারন্যাশনা এক্সচেঞ্জগুলি থেকে CryptoCurrency কেনাবেচা করতে পারেন। এছাড়ার কিছু কিছু CryptoCurrency এর নিজস্ব ওয়েবসাইট ও এক্সচেঞ্জ রয়েছে।
বিঃদ্রঃ (Disclaimer)
অধিকাংশ CryptoCurrency ডিসেন্ট্রালাইজড অর্থাৎ এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক নেই। যেকোনো দেশের মুদ্রার পেছনে যেমন সেই দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও সমর্থন থাকে, CryptoCurrency এর ক্ষেত্রে তা নেই। বিভিন্ন CryptoCurrency এর মূল্য সময়ে সময়ে অনেকটা ওঠানামা করে থাকে, যা CryptoCurrency তে বিনিয়োগকে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ বানায়।
এছাড়াও বিভিন্ন দেশের সরকার CryptoCurrency নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রাখে এবং সেই অনুযায়ী বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে বা করছে। তাই যেকোনো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের আগে বাজারের ঝুঁকি এবং আপনার দেশের ক্রিপ্টো সম্পর্কিত নিয়মাবলী সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান সংগ্রহ করুন।
বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সিকে একটি আর্টিকেলে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আমরা এখানে যতটা সহজভাবে সম্ভব ক্রিপ্টোকারেন্সিকে নিয়ে আলোচনা করলাম। আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলে এর বিভিন্ন পয়েন্টগুলি আলাদা আলাদা ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা আমরা করবো। বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে অন্য কিছু প্রশ্ন থাকলে তা আমাদের কমেন্টে জানাবেন, আমরা চেষ্টা করবো পরবর্তী লেখাগুলিতে সেই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার।
বিটকয়েন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আমাদের লেখাটি কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্টে জানান। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের সাথে যুক্ত থাকুন।