দেজাভু কী ? ৮০% মানুষ কখনো না কখনো দেজাভু এর শিকার হয় । কী এর রহস্য !
কখনো কোনো জায়গায় প্রথমবার বেড়াতে গিয়ে আপনার কি মনে হয়েছে যে , আগে কখনো দেখেছেন এই জায়গাটা ? কিংবা আপনার সঙ্গে প্রথমবার ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা যদি মনে হয় ইতোপূর্বেও এই অভিজ্ঞতা আপনার হয়েছে ; তাহলে আপনি দেজাভু-র শিকার ।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরাসি মনস্তাত্বিক গবেষক এমিল বোইরেক ১৯১৮ সালে তাঁর “L’Avenir des sciences psychiques” (লাভনির ডেস সন্স সিসিক বা মানসিক বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ) নামক বইটিতে দেজাভু বিষয়টি সবার নজরে আনেন ।
দেজাভু আসলে কী ?
দেজাভু (Deja vu ) কথাটি ফরাসি শব্দ । যার আক্ষরিক অর্থ “already sean” বা ইতিমধ্যে দেখা । কখনো কোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে যদি আপনার মনে হয় এই ঘটনা আগেও হয়েছে আমার সঙ্গে । কিংবা কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি মনে হয় আপনি এখানে আগে কখনো এসেছেন । অথচ আগে সত্যি সত্যিই আসেন নি কিন্তু মনে হচ্ছে কখনো এসেছেন , তাহলে আপনি দেজাভু-র শিকার ।
দেজাভু আসলে একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা যাতে মনে হয় এই কাজটি আগেও করেছেন বা দেখেছেন, অথচ আগে করেননি বা দেখেননি ।
কেন হয় এই দেজাভু ?
এর কারণ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায় নি ।
আগে মনে করা হত দেজাভু আসলে পূর্বজন্মের কথা । আবার দানিকেন তত্ত্বে যারা বিশ্বাসী তারা এলিয়েন তত্ত্বেও এর ব্যাখ্যা করতে চান। মনোবিজ্ঞানীদের মতে এটা মানুষের স্মৃতির এক বিশেষ বহিঃপ্রকাশমাত্র , যেখানে মনে হয় এই ঘটনা পূর্বের। আবার চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে মস্তিষ্কের মধ্যে ঘটা তথ্য সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয় এটা। একই ঘটনার সংকেত মস্তিষ্কে দুবার পাঠানো হয় , ফলে পরের বার্তাটি আগের বার্তাটিকে পূর্বের অভিজ্ঞতা হিসেবে ধরা দেয় ।দেজাভু বিষয়ে আরো নানা গবেষণা এখনো মাঝপথে রয়েছে।
দেজাভু কত প্রকার ?
সুইজারল্যান্ডের গবেষক আর্থার ফাঙ্কহাউজার দেজাভু এই প্রক্রিয়াটিকে (déjà experiences) অভিজ্ঞতার অর্জনের ভিত্তিতে দুটি ভাগে ভাগ করে বোঝানোর চেষ্টা করেন। যথা–
১. ইতোপূর্বে দেখা বা পরিদর্শন করা হয়েছে এমন অভিজ্ঞতা (déjà visite)
২. ইতোপূর্বে অনুভব করা হয়েছে এমন অভিজ্ঞতা (déjà vecu .
দেজাভু কাদের ঘটে ?
সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী অ্যালান এস. ব্রাউন ২০০৩ সালে তাঁর এক অনুসন্ধানমূলক গবেষণার ভিত্তিতে বলেন- পৃথিবীতে ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ জীবনে কখনো না কখনো এই দেজাভু-র শিকার হয়েছেন । তবে তরুণ বয়স অর্থাৎ ২১ থেকে ৪৫ বছরের মানুষের মধ্যে এর সম্ভাবনা বেশি দেখা গেছে।
এটা কি কোনো রোগ ?
আগে মনে করা হত দেজাভু বিশেষ মানসিক রোগ বা মানসিক কোনো জটিল অবস্থা । কিন্তু আধুনিক গবেষকদের ভিন্ন মত থাকলেও একটা বিষয়ে একমত যে এটা কোনো গভীর সমস্যার রোগ নয় । সুস্থ সবল স্বাভাবিক মানুষেরও দেজাভু ঘটতে পারে ।
দেজাভু এর বিপরীত জামাইস ভু , সেটা কী ?
দেজাভুর ক্ষেত্রে যেমন কোনো কিছু দেখে মনে হয় যে আগে সেটার সম্মুখীন হয়েছিলাম । কিন্তু এর উল্টোতাও ঘটে । অর্থ চেনা জানা কোনো কিছু দেখে বা শুনে মনে হয় এটা জানি বা চিনি না , আগে কখনো দেখি নি বা শুনি নি । অনেক সময় দেখা যায় পরিচিত কোনো শব্দ সেটার কী অর্থ একদম এ মনে পড়ে না , মনে হয় জীবনে শুনি নি । এই ঘটনাই হল জামাইস ভু । যা দেজাভু-এর সম্পূর্ণ বিপরীত ।
পৃথিবীতে অনেক রহস্যের সমাধান হয় নি আজও। দেজাভু ঠিক তেমনি একটি বিষয় । অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে এ সম্পর্কে।
তাহলে বন্ধুরা , আশাকরি মনস্তাত্বিক বিষয়ের নতুন কিছু আজ আমরা জানলাম । লেখাটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের শেয়ার করতে ভুলবেন না । এরকম আরো অনেক লেখা পেতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজটি লাইক করে সঙ্গে থাকুন । ভালো থাকুন আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ থাকুন । দেখা হচ্ছে নতুন কোনো আর্টিকেল সঙ্গে নিয়ে।